হাদীস
আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রহঃ)......আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
জামাআতে নামাযের ফযীলত একাকী আদায়কৃত নামায থেকে সাতাশ (২৭) গুণ বেশী।(সহীহ বুখারী-৬১৭)
(অন্য নুসখায় আছে,) আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রহঃ)......আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
জামাআতে নামাযের ফযীলত একাকী আদায়কৃত নামায থেকে পঁচিশ (২৫) গুণ বেশী।(সহীহ বুখারী-৬১৭)
মুসা ইবনে ইসমাঈল (রহঃ)......আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
কোন ব্যক্তির জামাআতের সাথে নামাযের সাওয়াব, তার নিজের ঘরে বা বাজারে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব থেকে দ্বিগুণ করে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমভাবে উযু করে, তারপর একমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা হয়, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মোচন করা হয়। নামায আদায় করার পর সে যতক্ষণ নিজ নামাযের স্থানে বসে থাকে, ফেরেশতাগণ তার জন্য এ দো‘আ করতে থাকেন—হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন, তাকে মাফ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।”আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযে রত অবস্থায় গণ্য হয়।(সহীহ বুখারী-৬১৮)
নসীহা
হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, একাকী নামায পড়লে যত সওয়াব পাওয়া যায়, জামাআতে নামায পড়লে তার চেয়ে ২৫ থেকে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এটা কেবল একটি সাধারণ গাণিতিক হিসাব নয়, বরং নামাযের গুরুত্ব, মুসলিম ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর রহমতের বিশাল নিদর্শন।
চলুন বিষয়টি একটি অঙ্ক দিয়ে বুঝি—
যদি কেউ ৫০ বছর ধরে একাকী বা বাড়িতে নামায পড়ে, তবে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্তে মোট ৫ গুণ সওয়াব পায়।
👉 ৫০ বছরে (১৮,২৫০ দিন × ৫) = ৯১,২৫০ সওয়াব।
আর যদি কেউ ৫০ বছর জামাআতে নামায পড়ে, তবে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্তে ১৩৫ গুণ সওয়াব পায় (২৭ × ৫)।
👉 ৫০ বছরে (১৮,২৫০ দিন × ১৩৫) = ২৪,৬৩৭৫০ সওয়াব।
📌 অর্থাৎ, জামাআতে নামায আদায়কারী ব্যক্তি একাকী নামায আদায়কারীর তুলনায় ২৩,৭২৫০০ বেশি সওয়াব লাভ করে।
এখন যদি কেউ একাকী নামায পড়ে ঐ পরিমাণ সওয়াব অর্জন করতে চায়, তবে তাকে অন্তত ১৩৫০ বছর নামায পড়তে হবে! অথচ একজন ব্যক্তি মসজিদে জামাআতে নামায পড়েই এত অল্প সময়ে বিপুল সওয়াব অর্জন করতে পারে।
শিক্ষা ও নসীহা
- জামাআতের নামায শুধু সওয়াব বৃদ্ধি করে না, বরং মুসলমানদের ঐক্য, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বও দৃঢ় করে।
- একাকী নামায পড়লে যে বরকত পাওয়া যায়, তা সীমিত। কিন্তু জামাআতে পড়লে আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমত নাযিল হয়।
- মসজিদে প্রতিটি পদক্ষেপে আলাদা করে সওয়াব লেখা হয় এবং গুনাহ মাফ হয়।
- নামায শেষে ফেরেশতারা দো‘আ করতে থাকেন— “হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন, মাফ করুন, অনুগ্রহ করুন।” এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে?
- জামাআত থেকে বঞ্চিত হওয়া মানে ৫০ বছরের ইবাদতকেও নগণ্য করে ফেলা।
তাই ভাই ও বোনেরা, যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, আল্লাহর ঘর মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায় করার চেষ্টা করুন। হয়তো আমরা যে সামান্য কষ্ট করি, সেটাই আখিরাতে আমাদের জান্নাতের সহজ পথ হয়ে যাবে।
0 Comments