প্রাপ্তি, অর্জন - Achievement

কেউ যদি আমাকে বলে, "তোমার জীবনের এচিভমেন্ট কি, সফলতা কি?" আমার উত্তর হলো, "আমার জীবনে কোনো এচিভমেন্ট নাই, সফলতা নাই"। কারণ মহান আল্লাহ তা'য়ালার সংজ্ঞায় সফলতা বলতে যা বোঝায় আমি সেরকম কোনো কিছুই এখনো পর্যন্ত অর্জন করতে পারি নি।

এচিভমেন্ট জিনিসটা আসলে কি? কোনো কিছু অর্জন করা এইতো। যেটা আমার সাফল্যের কারণ। তাহলে এই অর্জনগুলো তো সবসময় আমাদের সাথেই থাকার কথা। যেহেতু, এচিভমেন্ট হলো পরিশ্রমের ফল। কিন্তু মরার পর দুনিয়ার এই এচিভমেন্টগুলা কোথায় যায়। আমি বিলিয়নিয়ার, অফিসার, আমার অনেক পাওয়ার ইত্যাদি যদি আমাদের এচিভমেন্ট হয় তাহলে মরার পর এইগুলা আমরা সাথে নিয়ে যেতে পারি না কেন? যে এচিভমেন্ট আমি সাথে নিয়ে যেতে পারি না, যে এচিভমেন্টের ভ্যালু দুনিয়া পর্যন্ত সেটা এচিভমেন্ট হয় কিভাবে? নাকি এচিভমেন্টের এক্সপায়ার ডেটও আছে! 

না, এচিভমেন্টের কোনো এক্সপায়ার ডেট নাই। প্রকৃত এচিভমেন্ট সবসময় আমাদের পাশে থাকবে; মৃত্যুর পরেও। আর সেটা হলো পরকালের জন্য কাজ। এই পরকালের কাজটাই হলো আমাদের একমাত্র প্রকৃত এচিভমেন্ট; যেটা চূড়ান্তভাবে আমাদের সাফল্যমন্ডিত করবে। আর দুনিয়ার এচিভমেন্ট হলো ভ্রম, মরিচিকা। সময় যত যেতে থাকবে তত বুঝতে পারবো যে, এইগুলোর কোনো ভ্যালু নাই। যতক্ষণে বুঝতে পারবো ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫) 

দুনিয়ার (চাকচিক্যময়) জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধোঁকা থেকে যে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে, সেই হবে সৌভাগ্যবান। আর যে এই ধোঁকার জালে ফেঁসে যাবে, সেই হবে ব্যর্থ ও হতভাগা।

আলী বানাত, অস্ট্রেলিয়ার একজন তরুণ মিলিয়নিয়ার ছিলো। কোনো কিছুর অভাব ছিলো না। তার যে এচিভমেন্ট ছিলো আমরা হয়তোবা কয়েকবার জন্ম নিলেও তার ধারের কাছে যেতে পারতাম না। তিনি একজন সৌখিন মানুষ ছিলেন। তিনি যে ব্রেসলেট ব্যবহার করতেন তার একেকটির দাম ছিলো বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা, তার একেকজোড়া জুতার দাম ছিলো ১ লক্ষ টাকা, একেকজোড়া স্যান্ডেলের দাম ছিলো ৬০ হাজার টাকা। তিনি যে ফেরারি স্পাইডার গাড়িটি ব্যবহার করতেন তার দাম ছিলো ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও তার কাছে আরো বিভিন্ন প্রকারের কার কালেকশন ছিলো। এগুলো ছিলো তার এচিভম্যান্ট। এগুলো আমাদের কাছেও এচিভম্যান্ট হিসেবেই বিবেচিত।

কিন্তু, হঠাৎ তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। মূহুর্তেই তার জীবন চেঞ্জ হয়ে যায়। তিনি এতোদিন যেগুলোকে এচিভম্যান্ট মনে করতেন তা তার কাছে আর এচিভম্যান্ট থাকে না। হঠাৎই মনে হয় তার জীবনে কোনো এচিভম্যান্ট নেই। এতোদিন যা করেছেন সবই মরিচীকা। এরপর তিনি যা করেন তা অবাক করার মতো। মৃত্যুর আগে তিনি প্রায় ২ বছর সময় পান। এসময়টায় তিনি অসহায় মানুষের সেবা করেছেন। তার সকল সম্পদ এসব অসহায় মানুষকে দান করে গেছেন। তিনি তার শখের সবকিছু বিক্রি করে সেই টাকা মানুষের কল্যাণে দান করে গেছেন। তিনি তার শখের জুতোগুলো আফ্রিকার অনেক অসহায় শিশুকে দিয়ে গেছেন। তার কাছে কিছুই রাখেন নাই। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এচিভম্যান্ট আসলে কোথায়। তার ক্যান্সার হওয়াতে আল্লাহকে দোষারোপ করেন নি বরং, তিনি বলেছেন, "ক্যান্সার তার জীবনে আল্লাহ তায়ালার উপহার।

কাজেই, আমরা যে এচিভম্যান্ট এচিভম্যান্ট করে চিল্লাই, গলা ফাটাই; এই এচিভম্যান্ট টা আসলে কোথায় সেটা আমাদের জানতে হবে। 

- শাকিল আব্দুল্লাহ
Author Image

Shakil Abdullah
Assalamualaikum. I'm Shakil Abdullah. I'm a Student. Now I'm studying MSS (Hon's) in Sociology at Begum Rokeya University, Rangpur.

Post a Comment

0 Comments

TOP